অনলাইন ডেস্ক: দীর্ঘ দেড় মাস পর সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির দেখা মিলল তার নির্বাচনী এলাকা সরিষাবাড়ীতে। বিতর্কিত মন্তব্য ও নারীদের নিয়ে অশোভন বক্তব্য দিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর এলাকায় আসেননি তিনি।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তার চাচা মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান তালুকদার ইন্তেকাল করেন। এ মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শনিবার সকালে চাচাকে শেষ দেখা দেখতে আসেন মুরাদ হাসান। এ সময় মুরাদ তার অনুসারীদের সঙ্গে কৌশল বিনিময়ও করতে দেখা গেছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি নির্বাচিত হন ডা. মুরাদ। পরে প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। কিন্তু বিতর্কিত মন্তব্য ও নারীদের নিয়ে অশোভন বক্তব্য দিয়ে সেই মন্ত্রিত্ব হারান তিনি। এতে সরিষাবাড়ীর সাধারণ মানুষসহ দলের নেতাকর্মীরা তার বিচার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। মুরাদ হাসান পদত্যাগ করার পর দলের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে প্রতিবাদ জানান। মুরাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জামালপুর জেলাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে ও মুরাদের নিজ এলাকা আওনা ইউনিয়নের দলীয় সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য সুপারিশ পাঠায় জেলাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। মুরাদ হাসান তার মন্ত্রিত্ব ও দলের পদপদবি হারিয়ে ফেলার কারণে এলাকায় আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তার চাচার মৃত্যুতে এলাকায় আসেন তিনি।

জানাজায় অংশ নিয়ে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে কোনো রাজাকার জন্মগ্রহণ করেনি। কিন্তু জামালপুরের সরিষাবাড়ীর উপজেলার আওনা ইউনিয়নে একটি রাজাকারও জন্মগ্রহণ করেনি, এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি এবং সেই পবিত্র মাটি।

দুপুর ২টায় তার চাচার দাফন কার্যক্রম শেষ করে ফের ঢাকা চলে যান মুরাদ।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরমধ্যে গত ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উপায় না পেয়ে আবারো দেশে ফিরতে হয় তাকে। তিনি দেশে ফিরেছিলেন গত ১২ ডিসেম্বর। সেদিন (১২ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। মুরাদ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফিরেন।

বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

মুরাদ হাসান ভিআইপি গেটের সামনে এলেও সাংবাদিকদের দেখে আবার ভেতরে চলে যান। পরে বিমানবন্দরের ভেতর দিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যান। সেখানে তার জন্য হোন্ডা সিআরভি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি রাখা ছিল। মাথা ও মুখ ঢেকে সেই গাড়িতে চড়ে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তিনি পুলিশের উপস্থিতিতে একটি প্রাইভেটকারে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তাই ছিলেন। যদিও এরমধ্যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত ৬ জানুয়ারি ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান।

এর আগে বিকালে জাতীয় নম্বর ‘৯৯৯’- এ ফোন পেয়ে বাসায় পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই বাসা থেকে সটকে পড়েন ডা. মুরাদ হাসান। পরে সন্ধ্যায় ধানমণ্ডি থানায় এসে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিডি করেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান। লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, তাকে ও সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন মুরাদ।
– যুগান্তর